বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা হলো এককালের শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল তিক্ত, তবে গত কয়েক মাসে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যা আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
গত মাসে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে এবং সরাসরি ফ্লাইট চালু, সামরিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার, ভিসা প্রক্রিয়া সহজকরণ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই নতুন সম্পর্কের শুরু, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং সামরিক সম্পর্কের পুনর্স্থাপন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কালের মতো কিছুটা উন্নতি ঘটিয়েছে। তবে শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে (২০০৯-২০২৩) বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল এবং ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
এখন, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে নতুন গতি দেখা যাচ্ছে। সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক হুমায়ুন কবির জানান, দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে চলেছে। লন্ডনের কিংস কলেজের সিনিয়র ফেলো আয়েশা সিদ্দিকা মনে করেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যেখানে দুই দেশ ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়তে চাচ্ছে।
এদিকে, ভারতের জন্য এই সম্পর্কের উন্নতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার ভীনা সিকরি জানান, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের সামরিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার ভারতের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগামী এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার ঢাকায় সফর করতে পারেন এবং এসময় দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে।